SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

Admission
পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ২য় পত্র - প্ল্যাঙ্কের কালো বস্তুর বিকিরণ

     যে বস্তু এর ওপর আপতিত সকল বিকিরণ শোষণ করে তাকে কালো বস্তু বলে। তাপগতি বিজ্ঞানের কালোবস্তুকে নিম্নোক্তভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। 

     যে বস্তু তার ওপর আপতিত সকল দৃশ্য ও অদৃশ্য তাড়িতচৌম্বক বিকিরণ শোষণ করে তাকে কালো বস্তু বলে।

     অন্য কথায়, যে বস্তু সকল তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিকীর্ণ তাপ শোষণ করে তাকে আদর্শ কালো বস্তু বলে। আদর্শ কালো বস্তুকে উত্তপ্ত করলে এটি সকল তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিকিরণ নিঃসরণ করে। তাই একে কালো বস্তু বিকিরণও বলা হয়। অর্থাৎ কোনো আদর্শ কালো বস্তুর ওপর আপতিত সকল বিকিরণ শোষিত হয় আবার ঐ কালো বস্তুকে উত্তপ্ত করলে বস্তুটি সকল বিকিরণ নিঃসরণ করে। তাই বলা হয়, আদর্শ কালো বস্তু উত্তম শোষক ও উত্তম বিকিরক।

     আমরা জানি যে, কোনো বস্তুতে যদি বিকিরণ আপতিত হয় তাহলে ঐ বিকিরণের কিছু অংশ বস্তুর দ্বারা শোষিত হয় এবং কিছু অংশ প্রতিফলিত হয় এবং বস্তুটি স্বচ্ছ হলে কিছু অংশ সঞ্চালিত হয়। a দিয়ে যদি বস্তুটিতে আপতিত বিকিরণের শোষিত অংশ । দিয়ে প্রতিফলিত অংশ এবং দিয়ে সঞ্চালিত অংশ বোঝায় তাহলে সাধারণ বস্তুর বেলায় a + r + t  = 1 । কিন্তু আদর্শ কালোবস্তুর বেলায় কোনো বিকিরণ প্রতিফলিত ও সঞ্চালিত হয় না। এক্ষেত্রে r = 0 এবং t= 0, সুতরাং a = 1 কালোবস্তু শোষণ ক্ষমতা ৷ অর্থাৎ কালোবস্তু আপতিত বিকিরণের সম্পূর্ণটাই শোষণ করে। এটিই কালো ও বাস্তব বিকিরণের প্রধান পার্থক্য ।

    তাপ বিকিরণ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, এই বিকিরণের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বণ্টন বর্ণালির অবলোহিত অঞ্চল থেকে শুরু করে দৃশ্যমান অঞ্চল ও অতিবেগুনি অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত।

     চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানের মতে, বস্তুর পৃষ্ঠের নিকটবর্তী আহিত কণা ত্বরিত হলে তাপ বিকিরণ উৎপন্ন হয় এবং ছোট অ্যানটেনার মতো বিকিরণ নিঃসরণ করে। তাপীয়ভাবে উত্তেজিত আহিত কণার ত্বরণের বিন্যাস এমন হয় যে, বস্তু দ্বারা বিকিরণের নিরবচ্ছিন্ন বর্ণালি নিঃসৃত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে এটা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাপ বিকিরণের চিরায়ত তত্ত্ব অপর্যাপ্ত কারণ, কালো বস্তু থেকে নিঃসৃত বিকিরণের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বন্টনের ব্যাখ্যা দিতে এটি সক্ষম হয় না। কালোবস্তুর তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে, কালোবস্তু কর্তৃক নিঃসৃত মোটশক্তি বৃদ্ধি পায়। পরীক্ষালব্ধ ফলাফল থেকে দেখা যায় যে, এই শক্তি বিকিরণের হার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের উপর নির্ভরশীল। এ সময়ে ভীন বলেন কালো বস্তুর শক্তি বণ্টন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের পঞ্চম ঘাতের ব্যস্তানুপাতিক এবং মর্মে তিনি একটি সূত্র প্রদান করেন।

     ভীনের সূত্র ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বেলায় খাটে, কিন্তু দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বেলায় খাটে না। প্রাথমিকভাবে তরঙ্গ তত্ত্ব দ্বারা এর ব্যাখ্যা সম্ভব হয় না। পরে রেলি-জিন্‌স (Rayleigh Jeans) কোনো বস্তুর শক্তি বণ্টনের সম্পর্কে বলেন যে, তা' তরঙ্গদৈর্ঘ্যের চতুর্থ ঘাতের ব্যস্তানুপাতিক এবং সেই মর্মে তাঁরা একটি সূত্র প্রদান করেন। দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যে রেলি- জিসের সূত্র পরীক্ষালব্ধ ফলের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। কিন্তু ক্ষুদ্রতর তরঙ্গদৈর্ঘ্যে এটি পরীক্ষালব্ধ ফলের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। 

     এই প্রেক্ষিতে ১৯০০ সালে ম্যাক্সপ্লাঙ্ক বলেন যে, বিকিরণ নিঃসরণকারী স্পন্দনশীল অণু শক্তির যে একক E নিঃসরণ করে তা ছিন্নায়িত এবং E = hf

     এখানে f হলো অণুর কম্পনের কম্পাঙ্ক এবং h প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক, যার মান 6.63 x 10-34 Js। অণুর শক্তিকে বলা হয় কোয়ান্টায়িত এবং অনুমোদিত শক্তি অবস্থাকে বলা হয় কোয়ান্টাম অবস্থা।

প্ল্যাঙ্ক শক্তি বণ্টনের যে সূত্রটি প্রদান করেন সেটি হচ্ছে u(λ)=8πhcλ5ehc/λkt1

    এখানে, h = প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক = 6.63 x 10-34Js, c = আলোর দ্রুতি  λ= বিকিরিত শক্তির তরঙ্গদৈর্ঘ্য, k = বোলজম্যান ধ্রুবক এবং T = কেলভিন তাপমাত্রা। প্লাঙ্কের এই সমীকরণ থেকে প্রাপ্তমান পরীক্ষালব্ধ মানের সাথে মিলে যায়।

     ১৯০০ সালে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক সর্বপ্রথম এই কোয়ান্টাম তত্ত্ব প্রদান করেন এবং আইনস্টাইন তা সম্প্রসারিত করেন। প্ল্যাঙ্ক বললেন, কোনো বস্তু থেকে শক্তি নিরবচ্ছিন্নভাবে নিঃসৃত হয় না। শক্তি বা বিকিরণ ছিন্নায়িত অর্থাৎ শক্তি গুচ্ছ গুচ্ছ আকারে প্যাকেট বা কোয়ান্টাম হিসেবে নিঃসৃত হয়। আলো তথা যে কোনো বিকিরণ অসংখ্য বিকিরণ কোয়ান্টার সমষ্টি। প্ল্যাঙ্ক মনে করতেন কেবলমাত্র নিঃসরণ বা শোষণের সময় বিকিরণ বা শক্তি ছিন্নায়িত হয় অর্থাৎ কণারূপে নির্গত বা শোষিত হয় কিন্তু এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তরঙ্গ আকারে নিরবচ্ছিন্নভাবে সঞ্চালিত হয়।

     ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে আইনস্টাইন প্ল্যাঙ্কের কোয়ান্টাম তত্ত্বকে সম্প্রসারিত করে বলেন, শুধু নিঃসরণ বা শোষণের সময়ই শক্তি ছিন্নায়িত হয় না অর্থাৎ কণারূপে নির্গত বা শোষিত হয় না, শক্তি যখন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয় তখনও তা কণারূপে বিরাজ করে এবং ঐ কণাগুলোই আলোর বেগে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছিন্নায়িতভাবে শক্তি সঞ্চালিত করে। এই কণাগুলোকে বলা হয় ফোটন।

      ফোটন : কোনো বস্তু থেকে আলো বা কোনো শক্তির নিঃসরণ নিরবচ্ছিন্ত্রভাবে হয় না। শক্তি বা বিকিরণ ছিন্নারিত অর্থাৎ গুচ্ছ গুচ্ছ আকারে প্যাকেট বা কোয়ান্টাম হিসেবে নিঃসৃত হয়। আলো তথা যে কোনো বিকিরণ অসংখ্য বিকিরণ কোয়ান্টার সমষ্টি। আলোর এই কণা বা প্যাকেট বা কোয়ান্টামকে ফোটন বলে।

 

Content added || updated By